সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আওতাধীন সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক পরিচালিত জাতীয় সমাজসেবা একাডেমি মূলত একটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। অধিদফতর ও মাঠ পযায়ের্র সকল শ্রেণির কর্মকতাগণকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে পেশাগত কাজের মানোন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করাই একাডেমির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ।
১৯৬৩ সালের ১ মার্চ ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সেন্টার’ নামে ইউনিসেফের সহযোগিতায় সমাজকল্যাণ একাডেমির সূচনা। পরবর্তীতে ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭ সালে সরকারি নিয়ন্ত্রণে সমাজকল্যাণ বিভাগের অধীনে ‘সমাজকল্যাণ আন্তঃপ্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ নামে এটি পরিচালিত হতে থাকে। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে উন্নয়ন খাতে সমাজকল্যাণ আন্তঃপ্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির নামকরণ করা হয় ‘জাতীয় সমাজকল্যাণ একাডেমি’। প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী জাতীয় সমাজকল্যাণ একাডেমির নামকরণ করা হয় ‘জাতীয় সমাজসেবা একাডেমি’ এবং এটি ১৯৮৪ সালে স্থায়ী রাজস্ব খাতের প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১ ডিসেম্বর ১৯৯৮ আগারগাঁও-এ সমাজসেবা অধিদফতরের নিজস্ব কমপ্লেক্সে একাডেমির কার্যক্রম শুরু হয়। জাতীয় সমাজসেবা একাডেমিতে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি দু’ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অধিদফতরে কর্মরত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দাফতরিক ও বিভাগীয় কার্যক্রমের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একাডেমিতে বিশেষজ্ঞগণ দ্বারা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।
সমাজসেবা অধিদফতরেরর সুবিশাল কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে অধিদফতরের বিভিন্ন কর্মস্থলে কর্মরত উপপরিচালক, সহকারি পরিচালক, সমাজসেবা অফিসার এবং সমমান কর্মকর্তাগণের পেশাগত জ্ঞান শাণিতকরণ, দাফতরিক কার্যক্রমে প্রশাসনিক ও আর্থিক বিধি-বিধানের উপর অধিক তথ্যসমৃদ্ধ বিষয় অবহিত করার মাধ্যমে সমাজসেবা অধিদফতেরর সার্বিক কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে একাডেমি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে।
একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহ
প্রশিক্ষণকে কার্যকর ও ফলপ্রসু করার লক্ষ্যে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। অনুসৃত প্রশিক্ষণ পদ্ধতিগুলো হচ্ছে, আইস ব্রেকিং, ক্লাস লেকচার, রোল প্লে, অনুশীলন, এ্যাসাইনমেন্ট, ব্যক্তি/দলীয় উপস্থাপনা, ঘটনা সমীক্ষা, ফিড ব্যাক, চিত্র প্রদর্শনী, দলীয় আলোচনা, মাঠ পরিদর্শন, দলীয় কাজ ও দলগত প্রতিবেদন, উপস্থিত বক্তৃতা, ব্যবহারিক/হাতে-কলমে শিক্ষাদান এবং সাফল্যের কাহিনী উপস্থাপন।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রম মনিটরিং ও মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কমিটি কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণার্থীদের মাধ্যমে প্রশিক্ষক/রিসোর্স পার্সনের বক্তব্য উপস্থাপনের দক্ষতা মূল্যায়ন করা হয়। একাডেমির অন্যান্য সুযোগসুবিধা কতটা বিদ্যমান রয়েছে সে সম্পর্কেও প্রশিক্ষণার্থীদের মূল্যায়ন পর্যবেক্ষণপূর্বক তাদের মূল্যবান মতামত গ্রহণ করা হয়। প্রশিক্ষণ মডিউলে অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহের উপর চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণ ও অন্যান্য বিষয়ের উপর ভিত্তি করে প্রশিক্ষণার্থীদের ফলাফল মূল্যায়ন ও গ্রেডিং প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ কোর্সের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে ক্লাস লেকচারের জন্য কেবল উপযুক্ত, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে রিসোর্স পার্সন বা বক্তা হিসেবে নির্বাচন ও আমন্ত্রণ জানানো হয়।
জাতীয় সমাজসেবা একাডেমি ১৯৮৪ সালে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত সমাজসেবা অধিদফতরের ১৬৩৩১ জন কর্মকর্তাকে একাডেমিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে ১২৭৩৮ জন পুরুষ ও ৩৫৯৩ জন নারী কর্মকর্তা রয়েছে।